![]() |
অরুণেশ্বর দাস Mobile No. 9832432375 |
তপনবাবুর দুই ছেলে। একজন কাজ করে কল্যাণীতে। সরকারী চাকুরে। লেখাপড়ায় ভালো ছিল, ভালো কাজও পেয়েছে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকে ওখানে। ছেলেমেয়েরা ছোট। বড় ছেলে থাকে নিজের কাছে। স্কুল ফাইনাল পাশ করতে পারেনি। আর পড়াশুনাও করেনি। তখন সংসারের অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। দু-দুটো বোনকে বিয়ে দেবার পরোক্ষ দায়িত্ব ছিল তনুময়ের উপর। বাপ বেটা মিলে সবই একে একে সামলে নিচ্ছিলেন সবকিছু।
ছোট ছেলে তপোময় মাঝে মাঝে সবাই মিলে আসে বেড়াতে। দিনগুলো ভালো ভাবেই কেটে যায়। মেয়েরাও আসে। তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়েও আসে। তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়েও দিনগুলো কেটে যায় সুন্দরভাবে। রিটায়ার করবার যন্ত্রণাা একেবারেই ভোগ করতে হয়না। স্ত্রী কৃষ্ণাদেবীর তো তুলনাই হয় না। অনেক ভাগ্য করলে তবে এমন স্ত্রী পাওয়া যায়। ভাবেন, আমি যেন আগেই যাই। ও গেলে আমি সহ্যই করতে পারবো না। একথা কতদিন কত জনকেই না বলেছেন। ছেলেমেয়েরা তা জানেও, বোঝেও।
বাড়িতে তপনবাবু বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সন্ধ্যাবেলা মাঝে মধ্যে গল্পের আসর বসান। আসর জমে ওঠে ধীরে ধীরে। হাল্কা খাবার, চা, কফির সাথে চলে নানান অলোচনা, গল্প। স্ত্রীর কোন কুন্ঠা নেই এই আসর নিয়ে। বরঞ্চ আনন্দই পান সবাই আসাতে। তপনবাবুর বন্ধুদের কথায়– তোমার মত ভাগ্যবান আর সুখী লোক কটা আছে হে ? তুমি অনেক পুণ্যি করেছিলে তাই এমন সুসন্তান, এমন সব জামাই, বৌমাদের পেয়েছ। আর বৌদি ? তার কথা আর কি বলব: যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মী।
দিনগুলো সব এভাবেই চলে যায়। রাতে তপনবাবু হাল্কা আহার করেন। সেদিন তপনবাবু একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন। বড় নাইট বাল্বটা জ্বলতে থাকে। কৃষ্ণাদেবী এসে পাশে শুয়ে পড়েন। দুজনে চুপচাপ। একটু পরে কৃষ্ণাদেবী বলেন: নানা কাজ, গল্প গুজব করে দিনগুলো বেশ কাটিয়ে দিচ্ছ। তোমোকে দেখে কেউ বলতে পারবে না বুঝতে পারবে না তোমার অশান্তির কথা। কিন্তু রাতের বেলা তো দেখি ঘুমোতে পারনা ভালো ভাবে। মাঝে মাঝে বিছানায় উঠেও বস। কতদিন চলবে এসব ? বয়স বাড়ছে না কমছে ? ভাবনাটা একটু কমাও। তপনবাবু এক পাশ ফিরে বলেন : সব কথা কি মানুষকে জানতে দিতে হয় ? একেবারে গভীর যা, তা বলে হাল্কা হবার কিছু নেই। ওটা শুধু ঈশ্বরকে জানাতে হয়। নাও ঘুমোও, আমি ঠিকই আছি।
কৃষ্ণাদেবী পাশ ফিরে শুয়ে পড়েন। রাত বাড়তে থাকে। চারদিকে চুপ। জেগে থাকেন শুধু তপন দত্ত। দূর থেকে ভেসে আসে বিকট সব আওয়াজ কারখানা থেকে। যে বিশাল কর্মকান্ড ঐ লৌহ কারখানায় হয় তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। ওখানে কার, কখন যে কী হয়, কেউ বলতে পারে না। ভাবেন, ছেলেটাকে যদি আরেকটু পড়াতে পারতাম, তবে হয়ত...। কারখানার বিকট সব শব্দে বুকটা কেঁপে ওঠে প্রতিদিন, প্রতিরাতেই। আর, নিজে জানেন যে তাঁর ছেলে শুধু একা নয় সেখানে। কর্তৃপক্ষও সবরকম সতর্কতা নিয়ে রেখেছেন। তবু মন মানে না। আর বড় ছেলের যখন নাইট ডিউটি পড়ে তখন বুকটা বড় ভার হয়ে আসে। মনে হয়, স্পন্দন থেমে না যায় হৃৎপিন্ডের । এ বাড়িতে থেকেও নাইট ডিউটিতে তনুময়ের সাথে নিজেও থাকেন প্রতিরাতে। একথা কেউ জানে না, কাউকে বলাও যায় না।