September 17, 2014

কবিতা / নীল আলোর ফুল ১ / অঞ্জন কুমার দাস

আমার অভাবের পাশে রয়েছি আমি
তোমার ঐশ্বর্য্যের পাশে গর্বভরে তুমি
আমাদের সময় ফুরিয়ে গেল মাঝপথে
আমাদের অহংকার ছোট হলনা এতটুকু। 

এক মুঠো রোদ, উৎসব ১৪২০
সম্পাদক : প্রসূন শিকদার

September 13, 2014

প্রেমের গল্প / নীল আলোর ফুল / অঞ্জন কুমার দাস

শরৎ এখন। স্টেশনের পাশ দিয়ে পূর্ব দিকের যে রাস্তাটি চলে গেছে দূরে, শ্মশানের দিকে। শ্মশান পেরিয়ে কবরস্থান।  শমিত ও রণিতা  শেষ পর্যন্ত  এসে দাঁড়ায় কবরস্থানের পাশ দিয়ে সরু রাস্তাটির শেষ যেখানে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তার মজা খাল।  বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে ধুলোবালি।  পরিবেশ সতেজ। দুজন দুজনের চোখে তাকায়। রণিতা চোখ নামিয়ে নেয়।

শমিতের সামনে রুণু তুলে ধরে সেই পুরনো ডায়েরীটি। শমিত ডায়েরীটি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে, পৃষ্ঠা ওল্টায় না। শুধু পেছনের মলাটটি উল্টে গেলে দেখে ‘‘জন্মদিনে বন্ধুকে, বন্ধুতার স্মারক, — শমিত।’’ শমিতের মনে পড়ে।  শমিত  পুলকিত হয়। রণিতাকে দেখে, অবাক হয়।

অনেক দিনের চেনা বন্ধু দুজন। আড্ডা মেরেছে সব একসাথে, বন্ধুরা। তুই-তোকারি সম্পর্ক। আজ যেন দুজনেই দুজনার কাছে কত নতুন ! এই বুঝি প্রেমের আশ্চর্য রসায়ন!  শমিত  আশ্চর্য হয়ে দেখে,  রণিতা  যেন এক নীল আলোর ফুল। শমিতের  মোবাইলে প্রিয় রিংটোনটি বেজে ওঠে।  রণিতা  তর্জ্জনী তুলে দেখায়, খুব কাছে দুটি  নতুন কবর।  শমিত  কলটা রিসিভ করে না। বাজতে থাকে।

রণিতা  বলে, শমি তোমার এই রিংটোনটা শুনলে মনে হয়, শত শত যুদ্ধবাজ বীর সৈনিকের মৃতদেহ যেন সরে সরে যাচ্ছে চোখের সামনে দিয়ে সমবেত বিউগল বাজনার মধ্য দিয়ে। যেন যুদ্ধ শেষ জীবনের, স্বগোতোক্তির মতো উচ্চারণ রণিতার। অবাক হয়  শমিত, বিষন্ন হয়। বদলে দিতে চায় রিংটোনটি।

রণিতা বলে, থাক্। এই বিষন্নতা হলুদ প্রজাপতির দুঃখের মতোই একান্ত। দুঃখই তো একমাত্র যা মানুষকে নিভৃতে সঙ্গ দেয়।
নীলার সঙ্গে কোথায় যেন খুব মেলে রণিতার। জিনসের উপর বুটিকের হলুদ কুর্তা। শমিতের  খুব ইচ্ছে রণিতার পিঠের সেই জরুল চিহ্নটি ছুঁয়ে দেয়।

রণিতার মোবাইল বেজে ওঠে।  অফিসের বস্। কাল ছুটতে হবে শিলিগুড়ি।  শমিত  তর্জনী  দিয়ে রণিতার জরুল চিহ্নটা ছুঁয়ে দেয়,  রণিতা চমকে ওঠে।  কিছু বলে না। সোনালী বিকেলের আলো রণিতার পিঠে।  রণিতা  মোবাইলে কথা বলতে থাকে। আদুরে ধমকের সুরে বলে —  হচ্ছেটা কি ?  শমিত  হাত সরায় না।

শমিত  হাত সরিয়ে নেয়,  রণিতা  পেছন ফিরে তাকায়। রণিতার ভালো লাগছিল একজন পুরুষের  নিরেট নির্ভার ছোঁয়া।
শমিত  মনে মনে বলে, এই তো  সেই অনাদিকালের মেয়ে, যাকে সে চায়। মোবাইলে কথা ফুরোয় রণিতার।

সোনালী আলো ফুরিয়ে আসছে।  হঠাৎ একটি লোক পেছন থেকে হেঁকে ওঠে।  রণিতা  চমকে ওঠে।
— বাবু আপনারা কারা ? কোথা থেকে এসেছেন ? এখানে তো কেউ আসে না।  আমাদের দিকে তাকায় সন্দিগ্ধ চোখে।  লোকটি উত্তরের অপেক্ষা না করে খুব নির্লিপ্তভাবে বলে, মেয়েমানুষের সঙ্গে ভর সন্ধ্যেবেলায় এখানে থাকবেন না। গতকালই এখানে এই দুটি কবর দেওয়া হয়েছে। পাশের গায়ের দুটি জোয়ান ছেলে-মেয়ে।
 শমিত  বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে, একই দিনে দুটি কবর!
— হ্যাঁ, প্রধান, আলী হোসেনের মেয়ে, আর রিক্সাওয়ালা রহমত চাচার কলেজে পড়া ছেলে। লোকটির গলা আড়ষ্ঠ হয়ে আসে।  শমিত  কথা বাড়ায় না। লোকটি গরু নিয়ে হেঁটে এগিয়ে যায়।

চুপচাপ দুজন। নিবির সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকে রণিতা।  বাইকের উপর কাগজে মোড়া গোলাপের তোড়াটি শমিত রণিতাকে দেয়।  রণিতা  খুব যতœ করে তা নেয়। বুকের কাছে নেয় ফুলের তোড়াটি। গোলাপের  কাঁটাগুলিতে হাত বোলায় রণিতা।  তাজা গোলাপের তোড়াটি রণিতা দুটি কবরের মাঝখানে রেখে আসে। শমিত রণিতার পেছনে এসে দাঁড়ায়।

— ভালোবাসা বুঝি এরকমই। শুধু দুঃখ দিতে জানে। সুখ অতি সামান্যই। মণিকাঞ্চন বিদ্যুৎচ্ছটার মতো —  রণিতা  বলে।
— হ্যাঁ, ঠিক তাই।
—  শমিত, তুমি কি আমার জীবনের সবটুকু জানো ? দৃঢ়, আবেগহীন গলা রণিতার।


শমিতের দৃপ্ত উচ্চারণ — রণিতা । তুমি তো আমাকে চেন। জানো আমি দ্বিধাহীন, সপাট। আর তুমি যা জানতে চাইছ, তা খুব সহজ করে বলছি — ‘ভার্জিনিটি ইজ অ্যা স্টেট অব মাইন্ড’।   

রণিতা নরম হয়। তার চোখ মুখে ফুটে ওঠে এক দীপ্ত বিভা। শমিত তা টের পায়। সন্ধ্যা হয়নি এখনও। যদিও মেঘেরা বাড়ি ফিরছে। চাঁদ উঠছে আলতো করে।

দাগ, ২০১৩

September 10, 2014

আগমনী  অলক সরকার


পুজোর মাস। হট্ ফ্যাশন। হিন্দী ফিল্মের হিট শাড়ি,
বায়না বেশি। পকেট শর্ট। যে যেমন দেয় টিটকিরি।

পুজোয় কোথায় ? পাহার নাকি জঙ্গলে,
ভাল্লাগে না। চল্ সুশান্ত— কেটে পড়ি ‘মঙ্গলে’।

    
মেয়ের মাথায় ফরেন কাট্
    চুল কাটাতেই একশ’ ষাট

পাড়ার পুজোর বিগ বাজেট। হয়নি বোনাস;
বুঝিস্ তবু— কোন্ হিসেবে চাঁদা চাস্ ?

সেই যে তুমি। কোচিং ক্লাসে একটু দেখা,
        হৃদয়টা তো মানছে না
বলেই ফেলবো এবার পুজোয়
‘আই লাভ ইউ— তোমায় ছাড়া চলছে না’।

শারদ আকাশ ভাবপ্রবণ— লিটল ম্যাগ ঘরে ঘরে
গল্প চাই- কবিতা চাই, লোকাল কবির দাম বাড়ে।
যদু-মধু’র ক্যাসেট বেরোয়। সর্দ্দি-গলা তাতে কি!
সেক্স ভায়োলেন্ট ফাটাফাটি, স্টার সিনেমায় হিট ছবি।

______________________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

কবিতা / সুখপাখি / অঞ্জন কুমার দাস

অনিয়ত পিপাসার ভেতরেই
সৎসারে লুকিয়ে থাকে সুখ
কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না
কেউ সুখী কারও বুকে অসুখ
কেউবা খুঁজেই পায় না
সুখপাখিটির ঠিকানা।

স্মরণিকা, উত্তর দিনাজপুর জেলা বইমেলা, ২০১৩

September 9, 2014

গল্প / হেয়ারপিন : নিশিকান্ত সিনহা

প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ছোট্ট মেলা।
পুজো উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা বসেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, হাল্কা গোলাপী রঙের ছাপা শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজ আর নিটোল দুখানা হাত। হাতে সরু দুখানি চুড়ি। মাথায় একরাশ চুল, এলোমেলো খোঁপা বাঁধা। দেখতে খুব খারাপ না। মুকুল দেখছিল মেয়েটিকে।
মুকুলের ছোট্ট মনোহারী দোকানের জিনিসপত্র খুঁটিয়ে দেখছিল মেয়েটি। কী কিনবে ভেবে পাচ্ছিল না হয়তো। দোকানটা খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছে তার।  যদিও দুইদিনের মেলা, তবুও মাঠের মধ্যে সার সার সাজানো অন্যান্য মনোহারী দোকানগুলোর তুলনায় তার দোকানটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মেলার প্রথম দিন ভাল বিক্রিবাট্টা হয়েছে কিন্তু এই মেয়েটি ভাবতে ভাবতে মুকুল পিছনে রাখা টিনের বড় ট্রাঙ্কের গায়ে হেলান দিয়ে বসল।

গল্প / দাগ / নিশিকান্ত সিন্হা

গোটা কয়েক সিদ্ধ আলু চটকে অল্প নুন আর পুরোনো ঔষধের ছোট্ট শিশিতে রাখা একফোঁটা সরষে তেল ঢেলে দিল লিলি। কিছুক্ষণ আলুগুলো চট্কালো, তারপর গোল গোল নাড়কেল নাড়ুর মত করে শিবুর পান্তাভাতে দিল।
— একটা কাঁচা লঙ্কা নাই রে ?
— না !
— দ্যাখ না খুঁজে ...
— বললাম তো নাই !  লিলি বিরক্ত হয়ে কোমরে শাড়ীর আঁচল লেপ্টে নিল।
শিবু পান্তাভাতে আলুসেদ্ধ মেখে গোগ্রাসে গিলতে থাকে। তার ভীষণ ক্ষিদে পায়। হাঁড়িতে যতটুকু পান্তাভাত ছিল, সবটাই লিলি শিবুর থালায় দিয়েছে।

একটা কাঁচা লঙ্কা হলে শিবু তৃপ্তি করে খেতে পারতো। অনেক দিন হলো পিঁয়াজের নামগন্ধ নেই বাড়িতে। কুড়ি টাকা কিলো পিঁয়াজ কিনে খাওয়া শিবুর পক্ষে বিলাসিতার সমান।
অর্দ্ধেক পান্তাভাত আর অল্প আলুসেদ্ধ লিলির জন্য রেখে ঢক্ঢক্ করে তিন গেলাস জল খেয়ে শিবু একটা মস্ত ঢেকুর তোলে।
— ওটা রাখলে কেন ?
— তোর জন্য ...
— খেয়ে নাও। পুরুষ মানুষের পেট না ভরলে খাটবে ক্যামনে ? লিলি শিবুর এঁটো হাত ধরে বসায়।
শিবু এক পলক  তার বৌয়ের দিকে তাকায়। চোখে এক অসহায় চাউনি। শিবু জানে, লিলি মাঝে মাঝে উপোস করে থাকে। কেননা ভাত প্রায় দিন বাড়ন্ত।
— তাহলে তুইও খেতে বস। একরকম জোর করে লিলিকে পাতে বসাল সে।
— তুমি আগে খাও ...
— আরে বাপু পেটে জায়গা থাকলে তো ? শিবু এই বলে নিজের পেটটা যথাসম্ভব ফুলিয়ে দেখায় লিলিকে। তারপর জলের ঘটি নিয়ে সোজা মুখ ধুতে চলে যায়।

বৃষ্টি ও আমরা  জয়িতা রায়

একরাশ কালো মেঘ, একফালি ভেজা রাস্তা,
যতদূর চোখ যায় দেখেছি— কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে!
তবে কোথাও না কোথাও এক হয়েছে ওরা
ভেজা রাস্তা; কাক-ভেজা তুমি আর আমি।
তবু চলার বিরাম নেই তোমাতে আমাতে।
এক ঝলক বিদ্যুতের ঝলকানি এ হৃদয়ে ভয় দেখিয়েছিল,
তবু ভয় পাইনি, তোমার সঙ্গ ছিল বলে।
প্রবল বৃষ্টিতে বন্ধ চায়ের দোকানের চালের
নীচে দাঁড়িয়ে ভেজা তুমি আর আমি . . .
বাজ পড়া কবেকার পুড়ে যাওয়া মাথা ভাঙা
খেজুর গাছটির মাথায় নিশ্চিন্ত দুপুরে—
ভেজা শালিক দুটো তাদের ভালোবাসার কথা বলছিল।
ভালো লাগছিল। যদিও শুনতে বা বুঝতে পারিনি
একটি বর্ণও। তবু। তবু ভালো লাগছিল।
ভালো লাগছিল তাদের নিশ্চিত নিভৃত ভালোবাসা,
কখন যেন বৃষ্টি কমে গেছে, কালো মেঘটা,
তার কালো রং হারিয়ে একটু নীল, সাদা, হলুদ
রং মেখে নতুন কোন কাজের সন্ধানে নেমেছে
ততক্ষণে ভেজা তুমি আর আমি মেখেছি
ভালোবাসায় মাখা অধীরের প্রতিটি কণা।

_______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

যন্তর  সুব্রত বাইন

কত যন্তর আইল গেল
হদিশ পাইলাম না
ভালবাসা মাপবার লাইগ্যা
যন্তর পাইলাম না।
আহা! যন্তর পাইলাম না।

কত যন্তর আইবে যাইবে
গুণন যাইবে না
বেদনা কত জমল বুকে
ঠাহর পাইলাম না
হায়রে, ঠাহর পাইলাম না।

কেন মন করে আন্চান্
কখন যে ধরে ভালবাসার গান
বিঁধে কখন বুকে বেদনার তান
কিছুই জানলাম না
হায়রে, ভালবাসা মাপবার লইগ্যা
যন্তর পাইলাম না।

______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

কবিতা / প্রার্থনা / প্রণব কুমার দেবনাথ

উলঙ্গ পৃথিবীর নগ্ন চেহারায়
স্বপ্নে গড়া ভোর
উষ্ণ যৌবনের কালো রাতে
খন্ড ভারতের বিভৎসতা
মাতৃগর্ভের পূর্ণ লগ্নে
বাড়া ভাতে ছিল ছাই
নষ্ট মেয়ের আহুতি
বিরঙ্গনা বধূর প্রার্থনা
হে ধরণী, তুমি আরো
নষ্ট হও।।

______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

প্রজাপতির কথা  শম্পা দে

একটা প্রজাপতি সতেজ টুকটুকে
একদিন ধরা পড়লো।
তাকে সোনার ঘরে সোনার পালঙ্কে
সোনার শিকল দিয়ে রাখা হল।
সে ভুলে গেল উড়তে।

ফুলের গন্ধ, সবুজ গাছ  আর
স্বাধীন ভাবে নীল আকাশে বিচরণ,
তা ছিল গভীর প্রশ্বাসের মত।
ঠিকমত মুক্ত আকাশে
ওড়ার আগেই ধরা পরে গেল সে,
ডানা কাটা পড়লো না ঠিকই
তবে তা না উড়তে উড়তে
ভারী হয়ে গেল।
পোশাকি গাছ আর ফুল,
তার কাছে হয়ে উঠলো বড়।
সুন্দর আকাশের নীল নীলিমা
হারিয়ে গেল তার সুন্দর
পোশাকি মন থেকে।
আকাশ হয়ে গেল দূর,
আর সোনার শিকল হল আপন।
শিকলে সুখ পেল
শান্তি পেল,
বন্ধুর মত সাথী পেল,
কিন্তু কি যেন একটা পেল না।
যা পাওয়া খুবই আকাঙ্খিত ছিল,
ছিল প্রিয় প্রয়োজন।
হয়তো তা যে কি
তা না জেনেই প্রজাপতিটা
খাঁচার মধ্যে সুখ শান্তি নিয়ে
মরে যাবে।

কিন্তু . . .

______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

প্রার্থনা  মৌসুমী রায়

বিপদে নয়, আপদে রেখো—
এইটুকু যে চাই।
অর্থে নয়, অভাবে তবু—
শান্তিটুকু চাই।
গৃশ ছোট হোক, হৃদয় বড়—
তোমার করুণা চাই।

মাথার ওপর সূর্য থাক্—
হৃদয় মাঝে চাঁদ।
তোমা হৃদে থাকব আমি—
ক’রে তব নাম গান,
এই সাধ-আহ্লাদ।

সংসারেতে রেখো আমায়—
সারা জীবন ধরে।
চিরসুখী করো আমায়—
জন্ম-জন্মান্তরে।।

______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

হঠাৎই সেখানে  অপর্ণা মন্ডল

আবার সেই জায়গা, সেই দীঘি
খেজুর পাতার মর্মর ধ্বনি—
অনেক কচুড়ি ফুল তোমার জন্যে তুলেছিলাম।
এত ফুল যেন সারা আকাশের নীল রং
নেমে এসেছিল তোমার জন্যে।
আর আমি নিজেকে অস্পষ্ট করে তোমার জন্যই
দাঁড়িয়ে ছিলাম।
কচুর পাতাগুলি সেদিন বেশ
হেসেখেলে বেড়াচ্ছিল দীঘির পাড়ে।
সবুজ কার্পেটের উপর অগণিত প্রজাপতি
খেলা করছিল।
ওরা আমায় ডেকেছিল, কিন্তু আমি
আসিনি। কারণ তখনই হয়তো তোমার আসার পালা।
তুমি যখন আসবে—
সমস্ত প্রজাপতিগুলি স্তম্ভিত হয়ে
হয়তো তোমাকেই দেখবে— আর
কচুর পাতাগুলি তখন হয়তো
বৃষ্টির ফোটাও চাইতে পারে।
আমি কিন্তু ওদের হিংসা  করি না।আমার হাতে একরাশ কচুড়িফুল—
সেদিন বাতাসও নীলে নীল হতে চেয়েছিল।
কিন্তু এ ফুল আমি শুধু—
তোমার জন্যই রেখেছিলাম।
তাই আজও নেতিয়ে পড়া কচুড়ি ফুল
আমায় দেখে হাসে
আর প্রজাপতিগুলি সব খেলা শেষ করে
ঘরে ফিরে যায়।
কচুর পাতাগুলি সব ধ্বংসস্তূপ আজ।
তবুও আমি ভীষণ বোকা—
পথ চেয়ে রই তোমার।

_______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

প্রদর্শনী এবং আমি  মনোনীতা চক্রবর্তী

চারিদিকে সাজো সাজো রব— ঢাক বাজবে কিছু পরে
‘মা’— আসছেন ওদের  আঙিনায়— ওদেরই জন্য নৌকোতে।
শিউলি-কাশের ছোঁওয়াছুঁয়ি— মেঘ-মাদলের হাতছানি।
খেয়া ঘাটে আমি। ঠিক তখন!
একটা ছোট নৌকো— একজন মাঝি
সঙ্গে সে। দাঁড় বেয়ে নিয়ে গেল গন্তব্যে।
একটা গুমোট অস্বস্তি, চাপা অদম্য কৌতুহল
প্রদর্শনীর মেলায় আমি সঙ্গে সেই মেয়েটি।
প্রথম কক্ষ — মালা ঝোলানো ফ্রেমে আটা ছবি
একটা আগুন যুবক, একটি মেধাবী মনন
— আজ ইতিহাস!
দ্বিতীয় কক্ষ— পুত্রশোক, পক্ষাঘাতকে আলিঙ্গন করা এক জীর্ণ বৃদ্ধা
তৃতীয় কক্ষ— একমুখ দাড়ি, মাঝবয়সী পলাতক স্ত্রীর সন্তানদের ‘বাবা’
দুটো হাত কেটে বাদ দিতে হয়েছে
— একটা দুর্ঘটনা— কারখানার শ্রমিক
— আজ ইতিহাস!
চতুর্থ কক্ষ—উনিশ বা কুড়ি ভ্রুণহত্যাকারী এক অসহায় মা।
না, তার সীমন্তে কোন রং নেই।

— আজ বর্তমান।
বর্তমান ক্ষিদে— বর্তমান আব্র“—ঘুমন্ত সব ইচ্ছেরা।
রোজগার সেই মেয়েটি।
ক্ষয় সেই মেয়েটি।
রোগ সেই মেয়েটি।
দীর্ঘশ্বাস সেই মেয়েটিই।
দূরে তখন ঢাকের ধ্বনি, আলোর বাঁশিতে ভৈরবের আবাহন
            — মায়ের বোধন !!!

_______________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪


আমি  কৌস্তুভ দে সরকার

নদীও ফুরায়
মোহনায়
বিবাহিতা রমণীর মতো

আমি নদী নারী কিছুই হবো না।

গন্তব্যে ছুটে যায় বাস
বাসে কিছু লেনদেন হয়
সকলেই লেখাপড়া শেখে
একটা কিছু করার আশায়
আমি অহেতুক ছোটাছুটি করবো না

আমি নদী নারী কিছুই হবো না।

আজন্ম ভয় সকলের
আ-মরণ! চাপা আর্তনাদ
শ্মশানে যারা যায় যাক্
আমি এই ভিটে মাটি ছাড়বো না।

আমি নদী নারী কিছুই হবো না।

________________
সেতু, উৎসব সংখ্যা ২০০৪

September 8, 2014

প্রেমের চিঠি / হৃদয়ে শব্দহীন জ্যোৎস্না : অঞ্জন কুমার দাস

◌◌◌ এক ◌◌◌

তারিখ : ২৫শে বৈশাখ ১৪০৮

নীলাঞ্জয়ী,
আমি তো তেমন কবি নই। কবিতার অবয়বে আমার চলা ফুরায় না। সেই অপূর্ণ হৃদয়ের না বলা কথামালা নিয়েই এলোমেলো ভাবে সাজাচ্ছি আমার এই অলৌকিক নির্মাণ। কতটা  অর্থবহ হয়ে উঠবে জীবনের ধ্বনি, আমার শব্দবান্ধবেরা... তা এখনো অলীক।

কি লিখি তোমায়, রাত্রি। কি লিখি তোমায়? ভাবনার গহ্বর যে খালি হতে জানে শুধু। ক্কচিৎ বাষ্পে ভরপুর হয়। এই যে জীবনের কাছে মহাঋণ  নিয়ে এসেছি পৃথিবীর বুকে। এই জলের জীবন এই সংশয়ের জীবনে বেঁচে থাকাই শুধু সব নয়। শুধু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা মৃত্যুর অপেক্ষার মতো নীল কিছু। বরঞ্চ পরস্পর যৌথ খামার গড়ি। ভালোবাসার আঙুর সবাই মিলে চটকে শ্যাম্পেনের বোতলে পুরি অভিনব সম্ভাবনা।  ভালোবাসার মতো কি আছে এই জীবনে? ভালোবাসাই তো বেঁচে থাকার অফুরান জীবনীশক্তি।

কিসের জন্য এই অহংয়ের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে প্রশস্ত পথের দিকে যেতে চাওয়া আমার।  কত কি রয়েছে লেখা জীবনের ভেতর। সব কিছু বলার জন্য মাথা নুইয়ে আছি সাদা পৃষ্ঠার দিকে। কলমের কালির রেখা শুধু এঁকে-বেঁকে যাচ্ছে। কিছুই বলা হচ্ছে না বলার মতো।

এই যে এত সাহস নিয়ে এসেছি তোমার বুকের ডান পাশে। অভিমানে ফুলে ওঠা ঠোঁটের ওপর। সব সমর্পণের মতো বলে যাবো নিজের কাছে, রাত্রিলেখা নীলাঞ্জয়ী। একজন যথার্থ প্রেমিকের মতো আমি চেয়েছি তোমার সুখ।  তাই এতদিন বাদে, এতকাছে এসে পেতেছি করপুট। দাও হে, দাও কিছু . . . প্রেমের স্মারক চিহ্ন কিছু।

September 6, 2014

গদ্য / আমার প্রেম / বিনয় ভূষণ বেরা


প্রেম করা সই আমার হল না
আজি হইতে প্রায় চল্লিশ বৎসর পূর্বের কথা বলিতেছি। আমি তখন ষষ্ঠবর্ষীয় বালকমাত্র। বিদ্যালয়ের প্রথম সারির বেঞ্চে বসিয়া দ্বিতীয় পিরিয়ড-এর মধ্যবর্তী শিক্ষকবিহীন সময়টিতে গাহিয়া উঠিলাম—  ‘আষাঢ় শ্রাবণ   মানে নাত মন। মণিহার চলচ্চিত্র তখন বাজারে হিটকরিয়াছেতাহার গান লোকের মুখে মুখে। শুনিয়া শুনিয়া আমিও দু-এক কলি রপ্ত করিয়া ফেলিয়াছিলাম। চক্ষু মুদিত করিয়া সংগীত সাগরে নিমগ্ন হইয়াছিএক ধাক্কায় চটক ভাঙিয়া গেল। আমার সমপাঠী প্রসাদ আমার চাইতে এক বৎসরের বড়। আমরা বলিতাম পেসাদ’, আমাকে সতর্ক করিতেছেজানিস এসব প্রেমের গান, ইসকুলে গাইতে নাই। যতদূর স্মরণ করিতে পারি প্রেমশব্দটির সহিত সেই আমার প্রথম পরিচয়। শুনিলাম কিন্তু হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলাম না। স্পষ্ট বুঝিলাম অজ্ঞাতসারে এক নিষিদ্ধ আঙিনায় অনধিকার পদার্পণ করিয়াছি, শঙ্কিত  বক্ষে নিজেকে সংবৃত করিলামনা জানি কী মারাÍক ব্যাপার ঘটিয়া যায়!
আজিকার তরুণ পাঠকপাঠিকাগণ ভাবিতে  পারেনএই সামান্য ব্যাপারে এত ভ্যানতাড়া কিসের’ ? তাঁহাদের স্মরণ করাইয়া দিবচল্লিশ-পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে চলচ্চিত্র, দূরদর্শন সিডি-ডিভিডির এমন দৌরাত্ম্য চালু হয় নাই। তিন বৎসরেরর শিশুর মুখে দিল’ ‘প্যারশব্দের হরবখ্ত প্রয়োগ অকল্পনীয় ছিল এবং স্কুলছাত্রের পক্ষে প্রেমশব্দটির উচ্চারণও ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসপ্রযুক্ত।

গদ্য / কত কী রয়েছে লেখা... / সৌমিত্র চক্রবর্তী


‘‘হয়ত কথাটা জানাতে দেরি করে ফেলেছি, কোনটা সঠিক সময় ছিল সেটা আজও বুঝে উঠতে পারি নি। কিন্তু তুমি বিশ্বাস কর, সেই সব মুহূর্তগুলিতে যখন তুমি আমার সঙ্গে ছিলে . . . ., ’’ পঁয়ত্রিশবার এই ভাবেই শুরু করে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। শুধু মাত্র একটা ভয়, যেটা সবাইকে বুঝিয়ে বলা যায় না, আবার বলার দরকারও হয় না।

এই একুশ-বাইশ বছরের জীবনে হয়ত একুশ-বাইশবার প্রেমে পড়েছি, কোনোটা এক মিনিটের জন্য তো কোনোটা ... ..., কিন্তু কোনো সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একুশ হাজার বার ভেবে ফেলেছিলাম। ফল ... ? ঐ পঁয়ত্রিশবার লিখে ছিঁড়ে ফেলা— ‘‘হয়ত কথাটা জানাতে দেরী করে ফেলেছি ... ’’  তাই এটা নিশ্চিত যে, প্রেমে বেশী ভাবনা চিন্তা প্রেমের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাও কী সম্ভব ? প্রেম উইদাউট চিন্তা ভাবনা ? প্রশ্নটাই অর্থহীন। যেটা প্রেমের অন্যতম অনুভূতির একটা, তাকে বাদ দিয়ে অসম্ভব। আর এই ক্ষেত্রে চিন্তা ভাবনা যে সব বস্তুর চারপাশে ঘোরাফেরা করে তা হলপ করে বলা যায় প্রেমের স্থান-কাল-পাত্রযেগুলো প্রেমের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। এর কোন অংশে কম নয়। আর আমাদের মতো মফস্বল এলাকাতে তো এগুলোই সব সুবিধা-অসুবিধার প্রাণকেন্দ্র। তিনটির মধ্যে একটি বিরূপ হলে প্রেমের খাতায় গোল্লা ছাড়া উপায় নেই। আর আমার ক্ষেত্রে ঐ তিনটে বস্তু ? ঘটনার বর্ণনা করছি :

গদ্য / প্রেমের স্বরূপ / অরুণেশ্বর দাস


 প্রেম শব্দ এক অসাধারণ শব্দ। সাধারণ অর্থে অতি সাধারণ অর্থ দাঁড়ায়। ব্যপক অর্থে দাঁড়ায় অসাধারণ অর্থ। ব্যাপক অর্থে প্রেম সর্বব্যক্তিতে, সর্ববস্তুতে, এমনকি সাধারণ দৃষ্টির বাইরে যা, তাতেও প্রেম হতে পারে।

প্রেম শব্দ বিশেষভাবে নর-নারীতে চিহ্নিত। তাই প্রেম নিয়ে যে আলোচনাই করা যাক, নরনারী স্বাভাবিক ভাবেই এসে পড়ে। প্রেম শব্দ শুনলেই যেন এক অলৌকিক ভাব এসে পড়ে। বস্তুতঃ লৌকিক ভাব এর সাথে থাকে এক বাস্তবতা, এক স্থূলতা, পাশাপাশি অলৌকিক ভাব এর সাথে থাকে এক অবাস্তবতা এক সুক্ষ্মতা। এই সুক্ষ্ম নিবিড় ভাবই আমাদের  নিয়ে যায় এক অন্য জগতে যে জগতে একজন বলতে পারে আমি সুখী। সুখ শান্তি দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমে। প্রেম সেখানে অগ্নিশিখা।

কবিতা / পাগলীনি প্রিয়া / মনজুর আলম

সতের রঙের গোলাপ পরী তুমি
আঠারো রূপ নিয়ে চলো।
ফর্সা মুখে তোমার হরিণ চোখ
তুমি এক অপরা
জোনাকির মতো মিট মিট জ্বলো।

সামনে দুলিয়ে তোমার চুলের বেণী
যখন আমার কাছে আসো
তুমি এক কাঁচা কুমারী
সেদিনের হাসি মেঘলা দিনের
ঝিলিক রোদের মতো।

দুরন্ত চুল বেঁধে ওড়না ঢেকে খোপায়
হাওয়ার সঙ্গে দুলে চলো
তুমি এক বস্তির মেয়ে
বাকপটু হয়ে কাব্য ছড়াও
প্রেমের কিনারে কিনারে।

গোধূলির রোদে মাথা হেঁট করে
যখন নাগরের ধারে বসো
তুমি এক লজ্জাবতী
উদ্ভিদ জগতে লাজুকলতার
আসন তুমি পাতো।

তোমার কালো চুলের নিকষ বেণী
উপুর হয়ে যখন থাকো
তুমি এক শিবঠাকুর
রাঙা মুখে ভাঙ-এর নেশা
যেন এক অদ্ভূত মানান
     রূপোলী এক বনের মতো।

সতের রঙের গোলাপ পরী তুমি
আঠারো রূপ নিয়ে চলো . . .
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / অমৃতা তোমাকে / রত্না কুন্ডু

অজান্তে কখন যেন শতপদ্ম
বিকশিত হয়েছিল একসাথে।
তখনো হয়তো শরৎ আসেনি,
তবুও
চাঁদ, চকরো তখনো আলাপন হয়নি
তবুও
জানো, সযতনে সাজানো ছিল যে যুক্তি
কখন যেন তারা পেয় গেল মুক্তি।
আর তারাগুলোযেন হঠাৎ একসঙ্গে
হেসে উঠল, বলল, ‘এমনি হয়
আর তারা ভরা আকাশের সাতে তাদের
আলোয় তুমি শুকতারাহলে।
জানো, আর মুক্তি, তার সুক্তিহয়ে
কোন অজানা সাগর তলে ঝিনুকের সাথে
রয়ে গেল।
আর বলে গেল, খোঁজ করো
সপ্ত সাগর উথাল পাথাল করে।
সেই যে চোখ রেখে খুঁজতে গেলাম
তখন দেখি তোমার চোখ থেকে
মুক্তো বিন্দুগুলো ঝরে গেল।
তখনি শত বেণু যেন বেজে উঠলো
যমুনার পাড়ে, বৃন্দাবনে, মন পবনে
ছড়িয়ে গেল সে ধ্বনি, কোথা হতে শুনি
কি করি, কি না করি,
সবছেড়ে যাই
পূর্বাপর।
হীনতা, দীনতা, দুর্বলতা, আশা উচ্চাশার
সব চে,কাঠ ছাড়িয়ে পা রাখি
সবুজ মখমলে, অবুঝ হয়ে অমৃতের খোঁজে।
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / সুনামি ঢেউ / কৌন্তেয় নাগ

সুনামি ঢেউ আছড়ে পরার
অনেক আগে
ইচ্ছা ছিল তোমার সঙ্গে
সমুদ্র ঢেউ লুটোপুটি
একটি সকাল।

এক্কা-দোক্কা খেলতে খেলতে
হারিয়ে যেত মাছ-বালিকা
ঝাউবন ওই বালুর চরে,

সুনামি ঢেউ আছড়ে পরার
অনেক আগে
স্বপ্নদেখা  সমুদ্রটা
ফুলে ফেঁপে আসছে ফিরে
তীরের কাছে।

সুনামি ঢেউ আছড়ে পরে
হারিয়ে যায় অনেক মানুষ
সোনালী স্বপ্ন
বিকাল বেলা।

একটি সকাল

ঝাউবন আর বালুর চর
খুঁজে ফিরি
মাছ-বালিকা।
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / প্রেম / প্রণব কুমার দেবনাথ


হঠাৎ করে দিলি দেখা
আমার প্রথম যৌবনে,
রঙ-মহলী মন্টারে তোর
দোল-ফাগুয়ার ফুল-বনে।
সত্যি-রে তোর আকুলতায়
ব্যাকুল প্রেমের পাখি,
ঠাঁই পেলি না মনের মাঝে
রলো জলে আঁখি।
কেনরে তুই কইলি কথা ?
সত্য পরিচয়,
আসল-নকল প্রেমানলে
লাগছে কেন ভয় !
দাম্পত্যটা সম্পত্তি নয়
শুভেচ্ছাটাই বড়,
ফিরে আসুক তোর জীবনে
ভালোবাসা আরো।
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / কাঁটা / জয়িতা রায়


আমার পরিবর্তিত ঠিকানা মরুভূমি
আমার পরিবর্তিত নাম ক্যাক্টাস্।
পরিবর্তিত পদবী কাঁটা।
আমার চাকরি মরুদ্যানে।
কাজ মরিচীকার পেছনে ছোটা।
আর অলীক কিছু স্বপ্ন ফেরি করা।
ক্রেতার বড়ই অভাব এখানে।

সেদিন তোমায় দেব বলে মরুদ্যানে গোলাপ খুঁজতে গিয়ে
জ্ঞান  হারিয়ে লুটিয়ে পড়ি তপ্ত বালির বুকে
ভাগ্যিস তুমি আমার হাত ধরে তুলেছিলে।
স্মৃতি  ফিরে পেয়ে দেখি
খালি ঝুলি হাতে আমি একা, বিষণœ মরুভূমি।
তুমি জল দিয়ে যাও নি।
তুমি জানতে ক্যাকটাস জল ছাড়াই বাঁচে
              দীর্ঘ আয়ু।
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / সেদিন বৃষ্টিতে ওরা ভিজেছিল / স্বপন মজুমদার


শব্দের উঠোনে দাঁড়িয়ে তিনি পুড়ে যাচ্ছিলেন
অস্থিরতার গনগনে আগুনে
নিঃশেষ হবার আগে বিকেলের নরম রোদ
ঝুরঝুরে বালির মতো ভেঙে পড়লো হাওয়ায়,
মিউজিয়ামের সিঁড়ি দিয়ে বৃষ্টি গড়িয়ে গড়িয়ে মুক্তো
পাখির পালকের মতো হাল্কা ভাসমান
মেঘের শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভোরের আকাশ
উত্তরসূরীদের জন্য সিন্দুকে ভরে রাখলেন তিনি
সহজাত স্নেহ-ভালোবাসা, কিছু সম্ভাষণ,
আমন্ত্রণ জানিয়ে বুকের কাছে টেনে আনলেন সকালের রোদ;
দরজা খোলা রেখে বিক্ষিপ্ত মেঘ আকাশের দিকে
ছড়িয়ে দিলেন মুঠো মুঠো সুখ বর্দ্ধিত উচ্ছ্বাসে
তখুনি সমুদ্রের মতো অতলান্ত তার শঙ্খ চোখ
বিদ্যুৎ চমকে আলোকিত করেছিল পৃথিবী;
ভালো থাকার এমন মহার্ঘ মুহূর্ত্তে
লাজুক সেই মেয়ের দুচোখ বন্দী হল হাতের তালুতে

সেদিন সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত, বৃষ্টিতে ওরা ভিজেছিল
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / মধ্যরাতের কবিতা / সুশান্ত নন্দী


তুমি আমার মধ্যরাতের কবিতা
যখন সবাই ঘুমের মধ্যে কাদা
আমি তখন উঠছি জেগে
তোমাকে শেখার জন্য।

তুমি আমার মধ্যরাতের কবিতা
ইচ্ছে আর চাহিদা মতো
মুহূর্তেই বদলে ফেলি তুমি ও তোমাকে
শুধু নিজের জন্য।

তুমি আমার মধ্যরাতের কবিতা
তোমাকে শুধু  হাজার বার
          হারাতে শিখি
হন্যে হয়ে খুঁজে পাবার জন্য।

––––––––––––––––––––––
বিবর, এপ্রিল ২০০৫

কবিতা / চৈত্রের বিকেলে একদিন / নিশিকান্ত সিন্হা


সব দায়ভার ছুঁড়ে ফেলে
আত্মানুসন্ধানে থাকবে আর কতদিন ?
চৈত্র মাসের শুকনো বাতাসে শুধুই ঝরে আমের মুকুল
সেই কবে শুকিয়ে গেছে হাতে গোনা টবের কয়েকটি ফুল।

আকাশের মেঘ ঘুরে ফিরে উড়ে যায়
দিশাহীন অস্পষ্ট নিরুদ্দেশে
দোলের রং এখন ভীষণ ফ্যাকাশে বর্ণহীন
তোমার নিরাসক্ত জিজ্ঞাসাবিহীন চোখ
আমাকে হারিয়ে ফেলে স্মৃতির বিস্তৃত জঞ্জালে।

চারপাশের ধুলোভর্তি বৃত্ত আর চৈত্রের বাতাস
দুপুরের øিগ্ধ আবির্ভাবে আমি উঁকি দিই সন্তপর্ণে
তুমি রয়েছো বিভোর সব দায়ভার ছুঁড়ে
নিরাসক্ত জিজ্ঞাসাবিহীন তোমার চোখেরই মত।
––––––––––––––––––––––

বিবর, এপ্রিল ২০০৫