September 8, 2014

প্রেমের চিঠি / হৃদয়ে শব্দহীন জ্যোৎস্না : অঞ্জন কুমার দাস

◌◌◌ এক ◌◌◌

তারিখ : ২৫শে বৈশাখ ১৪০৮

নীলাঞ্জয়ী,
আমি তো তেমন কবি নই। কবিতার অবয়বে আমার চলা ফুরায় না। সেই অপূর্ণ হৃদয়ের না বলা কথামালা নিয়েই এলোমেলো ভাবে সাজাচ্ছি আমার এই অলৌকিক নির্মাণ। কতটা  অর্থবহ হয়ে উঠবে জীবনের ধ্বনি, আমার শব্দবান্ধবেরা... তা এখনো অলীক।

কি লিখি তোমায়, রাত্রি। কি লিখি তোমায়? ভাবনার গহ্বর যে খালি হতে জানে শুধু। ক্কচিৎ বাষ্পে ভরপুর হয়। এই যে জীবনের কাছে মহাঋণ  নিয়ে এসেছি পৃথিবীর বুকে। এই জলের জীবন এই সংশয়ের জীবনে বেঁচে থাকাই শুধু সব নয়। শুধু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা মৃত্যুর অপেক্ষার মতো নীল কিছু। বরঞ্চ পরস্পর যৌথ খামার গড়ি। ভালোবাসার আঙুর সবাই মিলে চটকে শ্যাম্পেনের বোতলে পুরি অভিনব সম্ভাবনা।  ভালোবাসার মতো কি আছে এই জীবনে? ভালোবাসাই তো বেঁচে থাকার অফুরান জীবনীশক্তি।

কিসের জন্য এই অহংয়ের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে প্রশস্ত পথের দিকে যেতে চাওয়া আমার।  কত কি রয়েছে লেখা জীবনের ভেতর। সব কিছু বলার জন্য মাথা নুইয়ে আছি সাদা পৃষ্ঠার দিকে। কলমের কালির রেখা শুধু এঁকে-বেঁকে যাচ্ছে। কিছুই বলা হচ্ছে না বলার মতো।

এই যে এত সাহস নিয়ে এসেছি তোমার বুকের ডান পাশে। অভিমানে ফুলে ওঠা ঠোঁটের ওপর। সব সমর্পণের মতো বলে যাবো নিজের কাছে, রাত্রিলেখা নীলাঞ্জয়ী। একজন যথার্থ প্রেমিকের মতো আমি চেয়েছি তোমার সুখ।  তাই এতদিন বাদে, এতকাছে এসে পেতেছি করপুট। দাও হে, দাও কিছু . . . প্রেমের স্মারক চিহ্ন কিছু।

সময়ের অন্ধকার আমাকে খুব টানে। যাঁরা ভালো নেই তাদের কথা ভাবতে ভাবতে আমার মাথায় যন্ত্রণা হতে থাকে। কিন্তু সেসব থেকে বহুদূরে আজ শুধু নিজের জন্য, প্রেমের জন্য লিখছি এই গদ্যলেখা, জীবনের রক্তনদী।

তুমি কি নেবে আমার এই সাহচর্য। এই ভালোবাসার স্পর্শমাখা এঁটো সুগন্ধী। যাঁর মধ্যে আমি যাই, সম্পূর্ণ ডুবে যেতে ভালোবাসি। এই নীল আলো বলো, আর যা বলো প্রেমের জন্য আকাঙ্খা।  আমার এই দুর্বল উপখ্যানের মধ্যে এলে হয়তো তোমাকে কোন স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারব না আলাদা করে।  অলৌকিক সত্যের মতো পারিজাত গন্ধে সুরভিত কিছু সুখের মুহূর্তই শুধু দিতে পারবো আন্তরিকতায়।

মানুষ তার গভীরে নিঃসঙ্গ থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু প্রতিদিনকার এই জীবন বলে যূথবদ্ধতার কথা। আমরা কি পরস্পর সেভাবে বাঁচতে পারিনা। একে অপরের আনন্দ-অশ্রু অদলবদল করে সামগ্রিক জীবন কাটাবো আমরা। এ কি তেমন অসম্ভব কিছু!

আমার কি আছে। সামান্য দেয়ালবাড়ি। ধুলোর উড়াউরি। রান্না ঘরে  উনুনের ধোঁয়া। চামরার ভেতর ধূসর মেলানিন। তবে আমার সম্ভাবনার কাছে আমি শিকড় ছুঁয়ে থাকি। তোমাকে সেখানেই নিয়ে আসতে চাই রাত্রি, অলৌকিক জ্যোস্নার  রাতে। তোমার সবকিছু তোমার থাকবে যেমন আছে এখন। আমি শুধু তোমাতে দিতে চাই আরো। আর হাঁটু মুড়ে দুহাতে পেতে চাই সামান্য কণকাঞ্জলী স্বর্ণরেণুর স্পর্শ। বলো এ কি খুব বেশি চাওয়া হলো প্রেমিকার কাছে !

তুমি শুধু একবার খুলে দাও এই অর্বাচীন  উচ্ছ্বল যুবকের সামনে, প্রেমিকের সামনে তোমার হৃদয়ের কপাট। সব তছনছ করে তোমাকে নতুন করে শেখাবো প্রেম কাকে বলে ।

ভুলে যাওয়া ঢের ভালো অতীতের স্মৃতিকাতর যন্ত্রণা। সুখ তার সবটুকু নিয়ে থাক মণিকাঞ্চন আলোর মতো নিভৃতে। বাঁচো হে মানবী, বাঁচো আগামী আলোর সম্ভাষণে। তোমাকে সে  পথে নিয়ে যাবো, যতটুকু পারি। প্রতিশ্রুতির বন্যায় আমি ভাসাতে পারিনা কাউকে। মায়ের কাছে শিখেছি জীবন কাকে বলে। নদী কাকে বলে।

রাত্রি তুমি কি জানো, প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম। দলছুট চেনা যুবকের বুকে মাথা রাখো। সে চায় তোমাকে প্রবলভাবে। যাকে তুমি চাও সামান্যতর। দীর্ঘ দীর্ঘ কাল আছি আমি, আমার সঙ্গে। তোমাকে দেখছি দূর থেকে জলের মতো, বন্ধুর মতো। আজ জানি কিভাবে বদলে যেতে চায় আমার এই চেনার ইচ্ছে। হৃদয়ের অ্যালবামের পাতায় পাতায় তোমার অন্যরকম স্পর্শ অন্তহীন জেগে ওঠে।

তোমাকে পেতে চাই আমি আমার ভেতর  তোমার মতন। যদি জানতে চাও তবে বলি নারীর সবটুকু আছে আমার অনুভবে। এভাবেই  সত্যিকারের মানব-মানবী হয়ে ওঠে পথ-ঘাটের অতি সাধারণ  মানুষেরা। জানিনা এত এলোমেলো লেখা কিসের জোরে ভেসে আছে। তোমার অন্তহীন প্রেমে পড়েছি বলেই হয়তো এমন হচ্ছে।

আমি আসলে একজন সুখী মানুষ। ভীষণ সুখে থাকি। শুধু তুমি এলে পূর্ণ হয় সেই সুখের ঝাঁপি। তোমারও পূর্ণতা নিয়ে নিশ্চিত হতে শেখো প্রিয় রাত্রি, নীলাঞ্জয়ী অপরাজিতা।

কিছুই বলা হলো না পরাবাস্তবতার কথা। বাড়িতে কনে দেখা উৎসাহ এসে গেছে। আমার নতুন চাকরীর তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেল। আড়াইশো পাতার বৃষ্টিতে ভেজার বয়সপড়ে ফেললাম একটানা আটঘন্টা। স্কুলে আজকাল বড্ড দেরী হয়ে যায়। যখন তখন কবিতার পোকা চিমটি কাটে মাথার ভেতর। সবকিছুর আড়ালে সর্বক্ষণ তুমি আছো হৃদয়ে, একটু ডানপাশে।

সব বলা হয়ে গেল আমার জীবনের সারসত্য। তবু এতসব লেখার পরেও বলছি আমার কিছুই বলা হলো না, বাকি থেকে গেল সব। সেসব কি কোনদিন জানতে চাইবে বন্ধু বলো রাত্রি, বলো নীলাঞ্জয়ী।

এই দীর্ঘ রাত অপেক্ষায় রেখেছি বলে একটু অভিমান করো আমার উপর। যদি অস্বীকার করো এই কবিতাগুচ্ছ, অসম্পূর্ণ চিঠির অবিন্যস্ত কথামালা তবে মাত্র একটি বার মিস কল করে অফ করে দিয়ো মোবাইল সুইচ। যদি এই অর্বাচীন  যুবকের কিছু কথা সামান্য সত্য বলে মনে হয় তবে এস.এম.এস-এর কোরকে পাঠাও একটি গোলাপ বর্ণমালা। এই দীর্ঘ রাত  আজ শুধু তোমার অপেক্ষায় থাকব।  সারা জীবনে নির্ঘুম একটা রাত তো উপহার দেওয়া হবে  প্রিয় বন্ধুটিকে!
                                                            অনি।


◌◌◌ দুই  ◌◌◌
তারিখ : ১৩ই আষাঢ় ১৪০৮
নীলাঞ্জয়ী,

জন্ম দিয়ে, রক্তপ্রবাহের প্রতিটি শ্রোণীতে মিশে থাকা অনিবার্য বাতাস, বিন্দু বিন্দু শিল্পিত মন দিয়ে গড়ে ওঠা এক প্রেমিক হৃদয় দিয়ে এমনভাবে কোনদিন কাউকে লিখতে শিখিনি। সে অলৌকিক অর্জন শিখেছি তোমার আপ্লুত প্রেমের ভেতর। তোমাকে প্রণাম, হে প্রেমের ঈশ্বরী। দীর্ঘ দীর্ঘ কাল, অসংখ্য মহাজীবনের অপেক্ষা পেরিয়ে পেয়েছি প্রেমের অগ্নিশিখার দহন। জীবনে তৃপ্তির বোধ জন্মেছে অতৃপ্তির ভেতর। এর জন্য একটা আস্ত জীবন কখনই যথেষ্ট নয়। তবু একক জীবনের ভেতর থেকেই তো আমাদের বেঁচে থাকার সমস্ত নির্যাসটুকু বের করে নিতে হবে। নইলে মৃত্যুদ্বারে পৌঁছে দাঁড়াতে হবে একান্তই খালি হাতে, বোবামুখে, নিরুত্তর, স্বর্গের দরজার বাইরে।

জানি সাহসী, দুর্বার মেয়ে তুমি। অনেক বেশী ঝঞ্ঝার মুখোমুখি হয়ে জীবনকে শিখেছ নতুনতর ভঙ্গিমায়। ভালোবাসাকে চেনো আমার চাইতেও প্রবল প্রবল শিকড়ের মতো। তবু, তবু বলি শোনো, আমার এই জীবনেও শিখেছি অনেক, অর্জনের সিঁড়ি বেয়ে উপর-নীচে চলাচল কম কিছু নয়।

এত সব উপলব্ধির জীবন থেকে জানি যা বাস্তব তা সবসময় সত্য নয়। যা আপাত মিথ্যা তা মিথ্যা নয়। সত্যআসলে  জীবনের ভেতর এক অলৌকিক উপলব্ধির নাম।

এই দৈনন্দিন জীবন, রোজকার ঘরকন্না, গরমে হাঁশফাঁস, অসময়ে লোডসেডিং এসবের ভেতর অভ্যস্ত জীবন পেরিয়ে যাঁরা  সত্যের কাছাকাছি, উপলব্ধির এই জীবনের ভেতর গহীন অরণ্যে, মরুদ্যানের পাশে র্পৌছতে পারে না, তাদের জীবন আমি মিথ্যে বলে মানি।

তুমি এসোছো আমার হৃদয়ের ভেতর, আমার সকল অসুন্দর পেরিয়ে এসেছো এক নির্মল অপাপবিদ্ধা  হ্রদের ধারে। বাতাসে কাঁপে  সে হ্রদের জল, হৃদয় যেমন করে কাঁপে প্রেমের দোলায়। এসো, দেখো  হ্রদের বিস্তীর্ণ স্বচ্ছতা জুড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য শালুক। সাদা ও লাল ফুল যূথবদ্ধতায়, সম্পর্ক তাঁদের বন্ধুতার, প্রেমের। ঐ দেখো একটু দূরে দুধ-সাদা বালিহাঁসের ঝাঁক। কত কথা বলে চলেছে উৎসবের আমেজে। ওদের রোজ উৎসব। জানো নীলাঞ্জয়ী !  ঈশ্বর ওদের দুঃখ দিতে ভুলে গেছেন। যত দুঃখ, যত কষ্ট, যত বঞ্চনার সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক সব, সব অকৃপণ ভাবে ঢেলে দিয়েছেন মানুষের জীবনে। এত হিংসে ঈশ্বরের। তবু, তবু মানুষ তো হারতে শেখেনি জীবনের কাছে। তুমি একা হেরে যাবে আমার বন্ধু হয়ে !  মানুষ জানে দুঃখ পেরোনোর পথ। কষ্ট পেরিয়ে সুখ অর্জনের অপার মহিমা, আপ্লুত সুখের রোমাঞ্চ পেতে সে শিখেছে জীবনের ভেতর। এতসব পারে বলেই মানুষ, মানুষ। ঈশ্বরের এত প্রিয়।

জীবনে হারাতে শিখেছি খুব, হারতে শেখা নয়। এই হারাতে শেখাও যে একটা শিল্প, জয়ের তিলক, তা জেনে গেছি বহু যুগ আগে। অন্ততঃ হাজার কিছু বছর হবে কবিতার হিসেবে। তবু এ হৃদয়  তো পেতে চায় সামান্য কিছু। সে চাওয়ার ভেতর একমাত্র নতুন চারা বেলিফুল গাছটিতে ফুটেছে একটিমাত্র সম্পূর্ণ ফুল, অসম্ভব স্নিগ্ধ, সুবাশিত। সে ফুল তুমি, নীলাঞ্জয়ী।

তোমাকে চেয়েছি আমার ভেতর তোমার মতন।  তোমার নির্ঝরিত ঝর্ণার পাশে থাকতে চেয়েছি একটি, শুধু একটি সম্পূর্ণ জীবন। সাত-জন্ম আমি মানি না। কেনই বা কাটাবে একরকম জীবন বারবার। বিবর্ণ কার্বন কপির মতো।

এসো, এসো হে ঈশ্বরী আমার প্রেমের অগ্নিশিখা, এই ছন্নছাড়া ছন্নছুট যুবকের  আন্তরিক পাতার সংসারে। দেখো, দেখো দৃশ্যমান বায়বীয় লৌকিক সুখের সমস্ত দরজা-জানালা হাট করে খোলা এখানে। তবু যেন প্রেমের মায়া অবারিত ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

দেখো, জ্যোস্না আলোর সঙ্গী হয়ে আসছে নীলাভ চোখের তারায় পারিজাত ফুলের আলো মেখে এক পল্লবিত সুখের ডালি নিয়ে ঈশ্বরের অযুত দূতেরা, যাঁরা চায় ভালো মেয়ে, দুরন্ত সাহসী মেয়ের প্লাবিত সুখের জীবন।  পাতার সংসারে তারা পেতে দিতে চায় ফুলের বিছানা। পথে পথে গোলাপের অহংকারী পাপড়ি। চারিধারে রজনীগন্ধার আহ্বান।

কবিতার, কবির, প্রেমিকের এই এলোমেলো কথামালা মিথ্যে মনে হয় ! এসব একবিন্দু মিথ্যে নয় নীলাঞ্জয়ী। আমরা শিখে গেছি জলের রঙ-বোধ, জলের আকারবোধ রেফ্রিজারেটরের ভেতর, ঠান্ডা পানীয়ের ভেতর। ডল্বি ডিজিটাল সাউন্ডট্র্যাক। পাটাতনের মত চোখের ভেতর রঙিন টিভি।  আর কিছু বাকী নেই ড্রয়িং রুমের জীবনে। সুখ তার সবটুকু নিয়ে ভীষণ আলগোছে আছে এসবের ভেতর। রঙীন কার্পেটের নীচে। এসবের ভেতর জীবন গড়তে পারবো না কোনদিন সেভাবে।  আসলে জীবন তো প্রতিনিয়ত অন্য কথা বলে কানে কানে। সে বলে ইচ্ছে মতো স্বাধীন বাঁচার কথা। উৎফুল্ল চঞ্চল পাহাড়ী নদী যেমন চায়। এত এত সামাজিক প্রবাহের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া লেখা নেই এই বিস্তৃত কপালে, এই ছন্নছুট ইচ্ছেডানার জীবনে।  আছে পায়ে পায়ে হাঁটাপথ, আলপথ, কথাবলা চোরকাঁটা মাঠ।

মাঠের শেষপ্রান্তে কোথাও কদম গাছের ছায়া। সেখানে বসে প্রিয় নারীর শাড়ির পাড় থেকে তুলে দেব সেই হিংসুটে চোরকাঁটাগুলি, ছুঁড়ে দেব দূরে।  তোমাকে পেতে চাই সেরকম। তুমি তো আমাদের মতনই অন্য গ্রহের মেয়ে, তাই না! তুমি যাবে আমাদের পথে, জীবনের পথে, যেখানে সম্ভাষণে দাঁড়িয়ে আছে দেবদূতেরা পারিজাত ফুলের ডালি হাতে।

এসো, এসো হে হাওয়ার মতো চঞ্চল, ফুরফুরে মেয়ে  হাওয়ার ভেতর। কেন তুমি যাবে যান্ত্রিক শীত-শীত উষ্ণতা মাখা জীবনের ভেতর। তুমি তো ভালোবাসো অকৃত্রিম প্রেমের উষ্ণতা, হীমশীতল প্রেমের বাতাস।   ভাবছো, তোমাকে সম্মোহনের মতো ফুসলিয়ে তাড়িয়ে আনছি এক অন্য জীবনের দিকে, যেখানে নিকষ  অন্ধকার আবর্ত রয়েছে ঘিরে চারিপাশে। ভালোবাসা, তুমি তো জানো, আমি তা পারি না,।  ভালোর দিকে, সুন্দরের দিকেই আমি ঠেলে দিতে জানি বন্ধুদের, প্রিয়জনদের, এই পৃথিবীর এখনও যাঁরা শেখেনি সাঁতার ভালো করে বাঁচার মতো।

নীল রেখেছো নাম তার। এ তো ভালোবাসা বলেই সম্ভব হয়েছিল। আজ তবে কিসের দূরত্ব চাও, বলো ?
জীবনের অতি প্রিয়জনদের মনঃকষ্টের, ইচ্ছার ভেতর নিজেকে বলি দিতে চাও ? আগামী সম্ভাবনার অঙ্কুরকে বিনষ্ট করতে চাও সমূলে ? প্রেমিকের মৃত্যু চাও তুমি ! এত এত উৎপাটন নিয়ে কি সুখী হতে পারবে, দিতে পারবে সামান্য সুখ কোন পুরুষকে। তোমার অতি প্রিয় আত্মীয়-বন্ধুদের।

নীলাঞ্জয়ী ভাবো, ঢের ভাবো জীবনের কথা, ডান-বাম, উল্টো-পাল্টা সব দিক ভাবো। কিন্তু এসো, এসো মাত্র একটি জন্মের অঙ্গীকার নিয়ে এই ছন্নছুট ছন্নছাড়া অসম্ভব প্রেমিকের নির্ভেজাল তেঁতুল পাতার সংসারে।  তোমাকে হারাতে দেব না এতটুকু তোমার নিজস্ব ফুলের স্নিগ্ধতা। এত সুপুরুষ আমি। এত ভীষণ নারীজন্ম আমার ভেতর।

জানি, জানি এতো সহজ নয় কিছুই। তবে তুমি অন্যগ্রহের মেয়ে বলে এত কথা, এত ভালোবাসা। সবটুকু অভিমান, রাগ মেঘনার জলে ফেলে এসেছি  আমি।  অন্য কোন মেয়ে হলে এত কিছুই বলার ছিল না রাত্রি, সত্যি বলছি।

এক জন্ম নিয়ে অপেক্ষায় আছি। তুমি এসো আরেক জন্ম নিয়ে।  মিশে যাই দুজনে আরও এক নতুন জন্ম নিয়ে  প্রেমের ভেতর। তোমাকে লেখা, তোমাকে  বলা ফুরোবে না কোনদিন, সূর্য নিভে গেলেও নয়। তাই অনিবার্য দাড়ির(। ) ভেতর তোমাকে বেঁধে ফেলতে চাই না। কমার(,) ভেতর তোমার নির্ঝর উৎফুল্লতার পাশে থাকতে চাই একটা মৃত্যুহীন জীবন। তাই বেহিসেবী কমার ভেতর শুরু করার ইচ্ছে রাখিবাড়িয়ে দাও একটি মুষ্টিবদ্ধ খোলা হাত , , , ,   নীল, , ,





◌◌◌ তিন ◌◌◌
তারিখ : ২৩শে আশ্বিন  ১৪০৮
শেষের কবিতা
নীলাঞ্জয়ী,

তোমাকে লিখি  নীল হৃদয়ের শেষ কথা!

‘‘সব চেয়ে সত্য মোর   সেই মৃত্যুঞ্জয়
সে আমার প্রেম’’

চমকিত হচ্ছো বন্ধু, আমার দুর্বার সাহস ও অপরিসীম লজ্জাহীনতা দেখে! কিন্তু আজ এই দায়টুকু তো আমাকে আমার কাছে পালন করতেই হবে। নইলে বিচ্ছেদের মধ্যে, একান্তু দুঃখবোধের মধ্যেও যে এক সুখের সন্ধান আমি নিয়ত পাই, পেতে চাই তার বদলে এক অনিশ্চিত যন্ত্রণা চিরকালের মতো আমার হৃদয়ে ক্ষতের মতো বাসা বেঁধে থাকবে। সেটুকু থেকে নিষ্কৃতি দিতে চাইবে নিশ্চয়ই এই ছিন্ন চিঠির শেষ লাইনটি পর্যন্ত পড়ে। সমস্ত  হৃদয়লেখার শেষ আজ, এইখানে। প্রেম আমার জীবনে এক আলোকবর্তিকার মতো। তুমিও তেমনই এক আলোকবর্তিকা ধূমকেতু।

ভালোবাসার কোন কৈফিয়ত নাই। হয় না। সে তার অন্তর্লীন মাধুর্য নিয়ে চলতে থাকে আঙুলে-আঙুলে মাখামাখি করে, হাতে-হাত রেখে উষ্ণতার ভেতর কিম্বা একাকী বিষন্ন সুখের ভেতর দিয়ে। একজন প্রেমী পৃথিবীর বুকে আসে এবং সে চায় ভালোবাসিবারে ভালোবাসিতে।  ভালোবাসাই প্রথম ও শেষ সত্য। ধরার মাঝে অধরার হাতছানি। মহাবিশ্ব রোজ-রোজ প্রসারিত হতে হতে ফুরিয়ে গেলেও ভালোবাসার সমাহিত মাধুর্য ফুরাবে না। এই বোধ রক্তের সঙ্গে সদা প্রবহমান। সেই বিশ্বাস, সেই আপ্লুতউচ্ছ্বাস হতেই এই চিঠিখানি লেখার ইচ্ছা ও স্পৃহা। এর থেকে কোনভাবেই নিজেকে নিবৃত রাখতে পারলাম না। সরি। তাই আজ তিনটি চিঠির শেষটি লিখছি।

‘‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম।’’

তোমাকে পেয়েছি আজন্ম লালনের ভেতর দিয়ে পূণ্যতম অর্জনের মতো।  প্রেয়সী, তোমাকে আমার সমস্ত অনুভূতির শিকড় দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই। তোমাকে প্রণাম করতে ইচ্ছা হয়। জীবনের এক পরম সময়ে জীবনকে চরম উপলব্ধির ভেতর দিয়ে এমন করে  কোনদিন পাবো তা আশাতীত। কিন্তু পেয়েছি। সে ঋণ কোনকালেই শোধবার নয়। তোমাকে ধন্যবাদ।

তুমি জানো, স্মৃতির অন্তরতম কোরকে মুহূর্তই ভাস্বর হয়ে থাকে। দিন, মাস, বৎসর আবছা হয়ে তার উদ্ভাসটুকু মুহূর্তের মধ্যে সঁপে দিয়ে মহাকালের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়। তাই মুহূর্ত, হাজার হাজার আলোকিত মুহূর্ত নতুনতর উদ্ভাসে উপহার দিতে চেয়েছিলাম। যৎসামান্য পেরেছি বৈকি! কিন্তু আমার এই সুখ ঈশ্বরের সইছিল না। ঘটা করে এক অঘটন আমার সমস্ত চরাচর দখল করে নিল। ভবিতব্য মানি না। তবু যেন এই ভবিতব্য আমার জন্য রচিত হয়েছিল বহুকাল আগে থেকেই।

‘‘তোমারেই  যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার ।’’

জানিনা কার ভালো, কার সুখ চাইলে তুমি। হয়তো আমার খুব বেশী ভালো, আমার খুব বেশী সুখ চেয়েছ তুমি! কিন্তু তুমি জানো না কি অপরূপ অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়েছো সেই বন্ধুটিকে যার সাথে ছিল চিরকালীন বন্ধুতার  যৌথ শপথ। এই তোমার বন্ধুতার উপর আস্থা ! হয়তো এটা আমারও অক্ষমতা। ততটা নির্ভরতা দিতে পারিনি।  তুমি ইচ্ছে করেই এক অসম্ভ¢ব প্রবঞ্চনা করেছ নিজের সাথে।  এরকম বন্ধুতার দাবী নিয়েই বুঝি আমরা পরস্পর এসেছিলাম এত কাছাকাছি!  জানিনা, বিশ্বাস হয় না। তবে তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাচ্ছি। ভালো থেকো বন্ধু।

রবীন্দ্রনাথ কেন আধুনিক বাঙালির  চেতনায় এত নবীন, এত রঙিন তা নতুনভাবে জানলাম। আশাহত পৃথিবীতে তাঁর গান ও জীবনের বহমুখী চিরকালের আধুনিক দর্শন হতে  বাঁচবার শক্তি ও উৎসাহ দুইই প্রবলভাবে পেলাম। অন্ধকারের চাইতে এক প্রবল অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে পারলাম তাকে আশ্রয় করে। তাই রবীন্দ্র্রনাথই হয়ে উঠল এই চিঠির বৈতরণী। মনের ভেতর প্রেমের উৎসাহ যে ফুরোয় না। সে বিন্দু-বিন্দু আয়োজন   উৎসব হয়ে তোমার দিকেই ছুটে যায় যেন। এ কেমনতর উৎসাহ, জানিনা। জানি, ভালোবাসার কোন কৈফিয়ত হয় না। তাই তাকে তুমি রোধ করতেও পারবে না। এ তো আমার অধিকারের সীমানায় পড়ে বন্ধু! শেষের কবিতাঘরে বাইরেআরেকবার পড়ে দেখো, দেখবে আধুনিকতার  যে বোধের কথা আমরা খুব  বলি তা কত স্বচ্ছ্ব। কিন্তু সে স্বচ্ছ্বতার কতটুকু আমরা জানি। সেই বোধের শিকড়ে আমরা যাঁরা নিজেদের আধুনিক বলে দাবী করি তারা কোনদিনই পৌঁছুতে পারব না। মিথ্যে  চাওয়া দিয়ে সত্যকে সন্ধান করা কোনদিনই সত্য হয় না।

‘‘নিত্য তোমায় চিত্ত ভরিয়া/ স্মরণ করি,
বিশ্ববিহীন বিজনে বসিয়া/বরণ করি -’’

তোমাকে আমি  পেছন ফিরে দেখতে বলি না। তবে এটাও তো কাম্য নয় যে পেছনে জমে থাকবে চাপ-চাপ অন্ধকার। সেই অন্ধকার আগামীর সহজ গতিটাকে যেন ব্যহত না করে, বিচ্যুত না করে, তাই সবসময় চাই পেছনে যা আছে তাও যেন সুন্দর হয়।  অবসন্ন অন্ধকারকে  আমি ঘৃণা করি। তাই সবকিছুকেই সুন্দর আলোকিত স্নিগ্ধরূপে দেখতে চাই। এটাই সত্য।  তুমি কষ্ট পাও তা আমি সাতজন্মেও ভাবিনা। সাতজন্ম আমি মানি না, তবু শব্দটিকে দখলে আনতে হল। কারণ ভাষার দক্ষতা যৎসামান্য। তাই অনিচ্ছুক শব্দকেই গ্রহণ করতে হল। নতুনের আকাঙ্খা নিয়ে বাঁচতে হয়। তা তুমি জানো। নতুনের আকাঙ্খা পূর্বাপর সবকিছুকে প্রথম আলোর উদ্ভাসে আপ্লুত করে। জীবনে আনে নতুন সজীবতা। হলুদ স্পর্শরেণুর সুখ। তুমি সুখী হও বন্ধু।

সেই গানটির কথাগুলিকে খুব সত্য বলে মনে হচ্ছে। আমরা খুব পাশাপাশি হৃদয়ে স্পর্শে উপভোগ করেছিলাম এর মাধুর্য। মনে হয় অবচেতনে যেন জেনেছিলাম আমার এই অলৌকিক প্রেম  আমার বাইরের দৈন্যতার  ভেতর দিয়ে কখনই ভেতরের ঐশ্বর্য্যে আসতে সফল হবে না !

তুমি  সুখ যদি  নাহি পাওযাও সুখের সন্ধানে   যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে, আরও  কিছু নাহি চাই গো।’’

তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, তোমার অকপট সাহস, তোমার উচ্ছ্বাস, তোমার সূচীভেদী অপলক দৃষ্টিমেঘ, তোমার মাইগ্রেনতোমার প্রসাধন এলার্জিতোমার রাতজাগা বমির সকাল। সব, সব খুব আন্তরিকভাবেই চেয়েছিলাম আমার জীবনে, আমার হৃদয়ে, বন্ধু।  তোমার অপ্রচুর ঐশ্বর্যকে নয়, বন্ধু। এখন এত এত লক্ষ যোজন দূরত্ব। কিন্তু এখনও তোমাকে তেমনই ভালোবাসি। তা তো অস্তমিত হয়ে  যেতে পারে না। তোমার নতুন পথে আমার সদা প্রস্ফুটিত বাগান হতে শত-শত হলুদ গোলাপের শুভেচ্ছা জানিও বারবার। 

‘‘তুমি আজি মোর মাঝে আমি হয়ে আছ।
আমারি জীবনে তুমি বাঁচো, ওগো বাঁচো।’’

আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা অহংকারী  অভাব, কষ্ট ও দুঃখকে আমি গর্ব বলে মানি। যা আমার সঙ্গে নিত্য এঁটো সুগন্ধীর মতো এঁটে আছে। এই গর্ব, এই খাঁটি অহংকার  নতুনভাবে জাগবার  ডাক দেয়। তার জন্য আমার একধরনের কাঁচা হলদে-সবুজ অভিমান আছে। সেসব নিয়ে বেশ আছি। সবের মধ্যেই তুমি আছো সমাহিত, উজ্জ্বলতর। এর মধ্যে তুমি এসে বাধা দিতে পারবে না। কারণ তা আমার একান্ত  নিজস্ব, নিবিড়তর। এর উপর তো কোন জোর-জবরদস্তি চলে না।  মিথ্যা বলে নিজেকে বড় দেখাবার ইচ্ছা ও ঈর্ষা আমার কোন কালেই ছিল না। এখনও নাই।  যা সত্য, যা মন্দের বিপরীত, প্রেমের আপ্লুত আলো সকলের মধ্যে সংক্রামিত করতে চেয়েছি এই জীবনে। সে পথ থেকে  পিছলে যাওয়া নিজের সাথে হঠকারিতা বলে মানি। আমার সব সুন্দর সম্ভ¢াবনার  মধ্যে তুমি আছো চির সহযাত্রী।

‘‘এ চিঠির নেই জবাব দেবার দায়’’
‘‘পারো যদি এসো শব্দবিহীন পায়,’’

আমি জানি। এ জন্মে এত পাপ তো আমি করি নাই, নিশ্চিত। পুনর্জন্মের কথা মুখে উঠে আসে কিন্তু সে  দোহাই তো  আমার জন্য সত্য নয়।  তাই এই বলে নিজেকে প্রবোধ দিই :- অপূর্ণতার ভেতর দিয়েই প্রেমের পূর্ণতর প্রকাশ! সেই সত্যকে হৃদয়ের এক কোণে সত্য বলে মানি। কিন্তু সত্য বলে তো মন মানে না।

সচেতনভাবে তোমাকে, তোমার পৃথিবীর কাউকেই অশ্রদ্ধা করতে চাই নাই, করি নাই। সে প্রবৃত্তি আমার নাই। এখনও জন্মে নাই। ঈশ্বরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু ঈশ্বরের আমার সাথে এমনতর চরম আত্মীয়তা না করলেই বুঝি চলছিল না! এর কোন যুক্তি খুঁজে পাই নাই। তোমার ইচ্ছাই তো আমার চাওয়া বলে মেনেছি হৃদয়-মনে। সে ইচ্ছে যেমনই হউক না কেন। যদি সুন্দরের ভেতর দিয়ে আরো ভয়ানক কিছু চাইতে তবেও কোনভাবেই তোমাকে এমন বিষন্নভাবে ফিরিয়ে দিতেম না বন্ধু। এমনভাবে কি কেউ বন্ধুতার মধ্যে দূরত্ব কামনা করে ? এর জবাব তো আমি চাইতেই পারি। আমার সে অধিকার তোমার উপর আছে বটে। থাক্, এখন সে জবাবে কোন কাজ নাই আর।

‘‘প্রেম এসেছিল, চলে গেল  সে-যে খুলি দ্বার
আর কভু আসিবে না। ’’

যদি বন্ধু ভাবো তবে বলি, নিজের মনচঞ্চল উচ্ছ্বলতাকে বয়ে যেতে দিও। কাউকে অন্ধভাবে ভালোবেসে নিজেকে বেঁধে ফেল না, হারিয়ে ফেলো না। ভালোবাসা কাউকে বাঁধে না । ভালোবাসা হলো হৃদয়ের কুহক, হৃদয়ের মিলন। হৃদয়ের এই  বন্ধন হতেই হৃদয়ের মুক্তি। আবার মুক্তিই মানুষকে হৃদয়ে-হৃদয় দিয়ে বাঁধে। স্বাধীনতা ও মুক্তি এক জিনিস নয়। নিজেকে নিজের থেকে মুক্তি দিতে না পারলে  বেঁচে থেকে বড় কোন লাভ হবে না। সুখ বলতে যা বোঝায় তা পাবে না।  অপরের জন্য যেমন বাঁচতে হয়, তেমনই নিজের জন্য বাঁচাটাও সার্থক হওয়া দরকার। নইলে বেঁচে থাকা মিথ্যা।  একথা মনে রাখলে দেখবে বেঁচে থেকে মহাসুখ। সেই সুখ তোমার জীবনে কামনা করি।

‘‘তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার। ’’

ভালোবাসতে জানলে সব কেমন মিলে যায়, সে খেলা তো আমরা খেলেছিলাম আনন্দে। দশটি কবিতা! দশটি গোলাপ! এ.বি.পি! জেঅক্ষরটি  অর্বাচীন প্রেমিক বন্ধুটির নামের   ভেতর  সমস্ত  শব্দটির আলোর দখল জুড়ে কি সুন্দর বর্ণময়, দেখ! নিজেকে হিংসে হয়। সেই জেঅক্ষরটি তার বর্ণচ্ছটাসহ তোমাকে উৎসর্গ করতে চাই। দুফোঁটা আনন্দাশ্রুর ভেতর তাকে গ্রহণ করো প্রিয়তমা। অক্ষরটি একটি গোলাপ কুঁড়ির মতন, বেলি ফুলের স্নিগ্ধতায় মাঝখানের খাঁজটিতে জুড়ে ছিল! আজ হয়তো তার নতুন অভিষেক হলো। জানিনা কি রূপে সে অভিষিক্ত হল !

এই  প্রলাপ শব্দরেখার জগদ্দল মিথ্যে ভাবনাসমষ্টি  কুটি-কুটি হয়ে ভোরের কুয়াশাঘন ভেজা বিষন্ন হাওয়ায়, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে নিশ্চয়ই। সেই ভবিতব্য এঁকেই এই চিঠিখানা বারবার অনেক যতেœ পরিমার্জন করে লিখেছি প্রিয় বন্ধুটিকে, হৃদয়ের শিউলি আন্তরিকতায় রাত জেগে। তাকে তার যোগ্য সম্মান জানিও। বাতাসে উড়িয়ে দিও এর শত-শত খন্ড। এতেই বুঝিবা আমার প্রেমের মুক্তি। তোমার মুক্তি আমা হতে। তোমাকে লেখার জন্য কমার যে নতুন উৎসাহ, নতুন ইচ্ছা আবিষ্কার করেছিলাম তা মনে রেখেই শেষ করছি, এত সহজেই কি সব ভুলে যাওয়া যায় বন্ধু ! আমার তো সে সক্ষমতা ঈশ্বর দেন নাই, আমি  তো নিজের উপরও জোর করতে পারি না। কি করবো বলো অনিবার অনাবিল ভালোবাসি তোমায়,,,

আগামী দিনের শুভেচ্ছা জানো, বন্ধুতা  জেনো,,,
সরি, নীল ৯ আর ।  তলিয়ে যাক্ সে নাম অতলে। যত্নে রাখি তা,,,

পুনশ্চ :
এত লেখার বদলে শেষের কবিতার শেষ লাইনকটি লিখলেই বুঝিবা এই চিঠির সার কথা, সব কথা লেখা হয়।

            ‘‘ওগো তুমি নিরুপম,
            হে ঐশ্বর্যবান,
            তোমারে যা দিয়েছিনু   সে তোমারি দান
            গ্রহণ করেছ যত      ঋণী  তত করেছ আমায়।
            হে বন্ধুবিদায়।’’ !




বিদ্র :    তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম তোমার কবিতাটি।

            কচি ঘাসের জল ভরা শিশির বিন্দুতে
            তোমার ভালোবাসা
            তপ্ত দুপুরে কাঠ-ফাটা রৌদ্রে ক্লান্ত বিকেলে
            তোমার ভালোবাসা
            হলুদ গোলাপের পাপড়ি মেশানো  স্নানজলে
            তোমার ভালোবাসা        আমায় ছুঁয়ে যায় অনাবিল
                                                    আন্তরিকভাবে
            প্রতি মুহূর্তে আবিষ্কার করি
            তোমার ভালোবাসার নতুন স্পর্শ
            ভালোবাসার গন্ধ লেগে থাকে নাকে সর্বক্ষণ।

সংগ্রহ করুন  এই অনবদ্য সংকলনটি 
একটি স্বল্প দৈর্ঘের প্রেম ও তিনটি অসম্পূর্ণ প্রেমের চিঠি :
হৃদয়ে শব্দহীন জ্যোৎস্না : অঞ্জন কুমার দাস
পৃষ্ঠা : ২৪, মূল্য : ১০ টাকা, সহজপাঠ পাবলিকেশন, ইসলামপুর। মুদ্রিত সংকলন পেতে ফোন, ইমেইল করুন।