September 4, 2014

গদ্য / কৃষ্ণকলি-একটি কিশোরী মেয়ে ও তাঁর দুটি স্বপ্নময় চোখ / অঞ্জন কুমার দাস

একটি মেয়ে ও তার দুটি স্বপ্নময় চোখের ঝিলিক আমার প্রাণে জ্বালায়  স্নিগ্ধতার অপরূপ আগুন। যে আগুনে ঝলসে যাওয়ার রোমাঞ্চ স্বয়ং ঈশ্বরের সাথে অনুপম প্রেমের তুল্য।  অন্য কিছুর সঙ্গেই তাঁর তুলনা মিথ্যে। এখনো সেই কিশোরী মেয়েটির পায়ে পায়ে তার বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার নিঝুম রাত্রি জেগে আছে মনের মণিকোঠায়। একটি বারও উচ্চারিত হয়নি  শব্দধ্বনি দুজনার মাঝে, শুধু হৃদস্পন্দন।  জেনেছি দুজনে-দুজনার উপস্থিতি। উপস্থিতির চুম্বকীয় বলয়ে আবেশিত মন। সে মন জানে না কিছুই। কিছুই জানে না সে মন। প্রেমের অর্থহীন বোধ শরীরে, হৃদয়ে অপার নীল ভালোবাসার অলীক মেঘ। হৃৎচঞ্চল কিশোরী মেয়েটির বুকেও বুঝি ছিল সেই অমোঘ প্রেমের হিমস্পন্দন। এই ক্ষণিক মুহূর্ত  শাশ্বত হয়ে আছে আমার হৃদয়ে। প্রতিটি প্রেমিক বুকে বুঝি তাই থাকে। কখনও বা অসম্ভব ঘুমের মাঝেও মনে পরে যায় কিশোরী মেয়েটির উপস্থিতির নিঝুম রাত্রি। প্রেমের উষ্ণতায় আবেশিত চুম্বকীয় বলয়। এইসব তুচ্ছ অনুভূতিগুলিই প্রমাণ  করে ভালোবাসার অভিজ্ঞতা ক্ষণিক, অনুভূতি চিরকালের।আমার ভোরের সাইকেল। টইটই পাড়া বেড়ানো। বিকেলে তাঁর স্কুল ছুটির অধীর অপেক্ষা। এক পলক দৃষ্টি যেন এক-একটি গোটা বসন্ত ঋতু। তাঁর জন্য নির্ঘুম রাত্রির শব্দচর্চা। গোলাপী চিঠির অনেকগুলি নিখুঁত ভাঁজ। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়েছে মেয়েটি তার আদুল স্পর্শকাতর হাতে। তার মুখটি মনে পড়ে, তার সাথে দেখা হয়, দেখা হল আজও !সময় পেরিয়ে গেছে বহু বছর। বদলে গেছে জীবনের মানে। জীবনে এসেছে সংসারের সদ্ভার। সেসব পুরনো দিন আজ সোনালী দুঃখের মতো অতীত। জীবনের অনুভূতিগুলি বাস্তবিক সংসারচর্চায় একটু একটু করে অগোছালো হয়ে গেছে।  তবু তার দুটি স্বপ্নময় চোখে স্বপ্নের গভীর মায়া। আজ তার বুকের ডানপাশে দূরে বসে দুরু  দুরু  বুকে ঝড়ে পড়ছে হিম। আমার ভালোবাসার স্নিগ্ধ নিবির হিম। সে জানে না কিছুই তার। আমি জানি আমার সব কথা। সে আমার প্রেম, কৃষ্ণকলি-একটি কিশোরী মেয়ে ও তাঁর দুটি স্বপ্নময় চোখ। এখনো পেরোয় নি কৈশোর আমার মনের চৌকাঠে। কোনদিন পেরোবে না।

এই গদ্যটি  অঞ্জন কুমার দাস-এর 'নতুনের কাছে দাঁড়াও সপাট' কবিতা সংকলনের অংশ।

No comments: