August 19, 2014

গল্প : গিফ্ট : মনোনীতা চক্রবর্তী

মনোনীতা চক্রবর্তী
সম্পাদক : দাগ 
‘‘আজকাল তোমার মধ্যে যেন ভীষণ লেপ্টে আছি আমি অথবা আমার মতো কেউ ! সেই সাজ  সেই অলংকরণ ! সবটাই তো বাইরে বাইরে। ভেতরটায় ? সেটাই তো আসল। সেটাই তো সব, -ব ! না হলে তীক্ষè ছায়া হয়ে ধাওয়া করতেই থাকে  মতোশব্দটি – ভীষণ ধারালো ! আমরা বোধহয় কেউ-ই কার-ও মতো নই, এসবে খুব একটা লাভ হয় না। একটা কৌতুক চরিত্রের রূপ পায়, এই আর কী ! এই পোস্টিংটা যখন তোমার চোখে পড়বে, তখন অলরেডি অনেকটা দেরি হয়ে যাবে ’’
অদ্রিজার স্ট্যাটাসটা দেখতে আর বুঝতে বুঝতেই ডোরবেলটা তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে। সাতজম্মেও বোধহয় গলা সাধে নি ! একজন মাঝবয়সি লোক দরজার ওপারে। বললেন
 ক্যুরিয়ার সার্ভিস থেকে এসেছি ম্যাম। শতভিষা সেন-এর নামে একটি পার্সেল আছে।
 আমিই শতভিষা সেন।
ক্যুরিয়ার রেজিস্টারে সই করার পর তিনি আমার হাতে একটা বড় ব্যুকে আর একটা গিফট্ প্যাক তুলে দেন। র‌্যাপারের রিফ্লেক্টে নিজের  উজ্জ্বল মুখটা দেখে বুকের ভেতর বেজে ওঠেন বিসমিল্লা !
ধুপ্ করে ব্যুকেটা রেখে প্যাকেটটা খুলতেই-ই দেখি আমার পছন্দের সব কটা মিষ্টি! তখনই ভাবি যে এত্তো মিষ্টি ! এ ঠিক মৃগনাভর-ই কাজ, পাগল একটা !
একটা গুলাবজামন খেতে খেতে ড্রেসিং ইউনিটের এক দেয়াল কাঁচে সুখ জরিপ করে নিতে নিতেই চোখ আটকায় আয়নার উল্টো পাশে আমাদের প্রিয় বিছানায় রাখা ব্যুকের ওপর। সাদা ক্যানভাস জুড়ে যেন রঙ-বর্ষা ! ঝাঁপিয়ে পড়ি ফুলের ওপর। দুহাত দিয়ে বুকে জাপটে ধরতেই ফুলের আড়াল ভেঙে ভেসে উঠল সাদা-কালো ছাপার হরফ  ম্যারেজ সার্টিফিকেট। সাথে একটা চিরকুট, তাতে লেখা
         
           শতভিষা,
            অদ্রিজা আর আমি আজ থেকে একসাথেই থাকবো।       
সাধ্যমতো     ভালো থেকো।
                                                                        মৃগনাভ
কিছু ভাবার বা বোঝার আগেই মোবাইলের অ্যালার্মিং টোন্ এফ.বি নোটিফিকেশন  অদ্রিজা মিত্র অ্যাডেড্ এ্য ফোটো অব্ ইউ, টু অ্যাড দিস্ টু ইওর টাইমলাইন, গো টু টাইমলাইন রিভিউ।
এমনিতেই আজ অনেকক্ষণ লোডশেডিং থাকাতে ইনভার্টারটাও আর কথা রাখলো না। তুমুল কালোয়-স্তব্ধতায় মোবাইলটা একা একাই বেজে উঠল সুনীলদার অভিমানী গলায়  ‘‘কেউ কথা রাখেনি /      তেত্রিশ বছর কাটলো / কেউ কথা রাখেনি ...’’

 বেজেই গেল   বেজেই গেল ...  

দাগ, উৎসব ২০১৩

No comments: